Breaking News :

লালমোহনে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা ; ফুচকা বিক্রি করে পরিবারকে করছেন সহযোগিতা

অনলাইন ডেস্ক :

লালমোহন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা সাথী (১৪) । ৭ (সাত) বছর বয়স থেকেই বাবার ফুচকার দোকানে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বর্তমানে সে ফুচকা তৈরী, চটপটি বানানো, ঝালমুরি ও নুডলস তৈরী করে বিক্রি করছেন। বাবা অসুস্থ থাকলে একাই দোকান পরিচালনা করছেন । ভোলার লালমোহন পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড চরছকিনা গ্রামের খজ্জু হাওলাদার বাড়ীর মো. আবুল কালামের মেয়ে তানজিলা সাথী। ৩(তিন) বোন ১(এক) ভাই’র মধ্যে মেঝ মেয়ে তানজিলা। তার বাবার ফুচকার দোকান লালমোহন সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল পার্কের মধ্যে। বড় বোন বিয়ে হওয়ার কারণে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। ঘরে রয়েছে মা, ছোট বোন এবং সবশেষে একটি ভাই।

তানজিলার সাথে কথা বললে সে জানায়, গত সাত বছর ধরে আমি বাবার দোকানের কাজে সহযোগিতা করছি। পাশাপাশি পড়ালেখাও যতটুকু সম্ভব চালিয়ে যাচ্ছি। যখন দোকানে কাস্টমার থাকে না তখন এখানে বসেই লেখাপড়া করি । প্রতিদিন ভোরবেলায় দোকানে চলে আসি, আবার ১০টার আগে স্কুলে চলে যেতে হয়। ২ টায় স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাড়ীতে গিয়ে ভাত খেয়ে ফের দোকানে চলে আসি। এসেই কাস্টমারের চাহিদানুযায়ী ফুচকা, চটপটি, ঝালমুরি, নুডলস তৈরী করি। কাস্টমারেরা খাওয়ার পর পেলেট পিরিজ চামুচসহ অন্যান্য সামগ্রি ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার করি। যখন পার্কে কোনো অনুষ্ঠান হয় তখন কাস্টমারের অনেক ভীর থাকে। বেচাকেনা ভালো হয়। যখন কোনো অনুষ্ঠান থাকে না তখন একটু কম হয়। দোকানের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। বেচাকেনার মধ্যেই চলে আমার পড়ালেখা। আমাদের সংসার ভালোভাবে চলার জন্য প্রতিদিন লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার দোকানে সময় দিচ্ছি। বাবা অসুস্থ হলে আমি একাই দোকান পরিচালনা করি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সে বলে, আমার স্বপ্ন পড়ালেখা শেষে একটা চাকুরী করবো, বাবা-মা ও পরিবারের পাশে দাঁড়াবো।

তানজিলা সাথীর বাবা মো. আবুল কালাম বলেন, ছোট থেকেই তানজিলা আমার ফুচকার দোকানে আমাকে সহযোগিতা করছেন। দোকানে কর্মচারী রাখতে পারছিনা তাই মেয়েকে দিয়ে দোকান পরিচালনা করছি। প্রায় ৭ বছর মেয়ে আমার দোকানে আমার সাথে রয়েছে। পাশাপাশি পড়ালেখাও করছে। এই বছর সে লালমোহন কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা অংশ নিয়েছে। পরিবারে আমার ৩(তিন) মেয়ে ও ১(এক) ছেলে আছে । এই দোকানের আয় দিয়েই আমার পুরো সংসার চলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আমি এখন অনেক অসুস্থ। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছিনা। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন মেয়ে সাথী একাই দোকান পরিচালনা করে। আমি পার্কের ফুটপাতে দোকান করছি। আমার স্থায়ী একটি দোকান হলে ভালো হতো।

ফুচকা খেতে আসা ঝরণা, আমেনা, মিমি, আরজু, ইকবালসহ কয়েকজন জানান, সাথীর হাতের ফুচকা অনেক ভালো। পার্কে আমরা আসলেই সাথীর হাতের ফুচকা খাই, ও খুব ভালো ফুচকা তৈরী করে। মাঝে মধ্যে আমরা ঝালমুরি, চটপুটি ও নুডুলস খাই। পড়ালেখার পাশাপশি বাবার দোকানে ও কাজ করে পরিবারে সহযোগিতা করছে এটা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা সাথীর উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, শিক্ষার্থী সাথীর পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই; প্রতিটি শিক্ষার্থী সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হোক।