মেঘনা-তেঁতুলিয়া হঠাৎ পাঙাশ মাছে সয়লাব!
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় জেলা ভোলা জলসীমায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে বড় সাইজের পাঙাশ মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি গত ছয় দিনে যত পাঙাশ ধরা পড়েছে তেমনটি সাধারণত দেখা যায় না। এরা শান্ত প্রকৃতির মাছ। স্বাদুপানি থেকে স্বাদুপানিতে অভিপ্রায়ণ ঘটে। তবে হালকা লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। বর্ষার সময় মোহনা অঞ্চলে এদের প্রজনন ঘটে।
‘সাধারণত শীতের শুরু আর শেষের দিকে নদীতে পাঙাশ ধরা পড়ে। কিন্তু এতো পাঙাশ এভাবে কখনো আসতে দেখিনি।’
২ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে চষে বেড়াচ্ছে জেলেরা। তবে ইলিশ নয়, জালে উঠছে পাঙাশ। একেকটির ওজন আবার ৮ থেকে ১০ কেজি। ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের এসব পাঙাশ মাছের দর কাষাকষিতে মুখরিত হয়ে উঠছে স্থানীয় মৎস্য ঘাটগুলো। আর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পাঙাশ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। বড় আকারের একটি পাঙাশই বিক্রি করা যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সকালে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেল বেশিরভাগ আড়তেই বড় আকারের পাঙাশ। যদিও এখানকার বাজারে নদীর পাঙাশের তুলনায় চাষ করা পাঙাশই বেশি ও অনেক সস্তা দামে পাওয়া যায়। একটি ১০/১২ কেজি ওজনের নদীর পাঙাশ মাছ যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মতো প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়, সেখানে চাষের মাছের কেজি ওজনভেদে ১৫০-২৫০ টাকার মতো দরে বিক্রি হয়।
এক সময় ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই দেশি পাঙাশ অনেক সহজলভ্য ছিল এবং দাম ছিল হাতের নাগালে। কিন্তু কালের বিবর্তনে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নাব্য হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা-পুকুর ছেঁকে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুশে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো, মা মাছ নিধন, নদীর চর, প্রজনন এলাকা ধ্বংস, পাঙাশের পোনা নিধন, অতিরিক্ত মাছ আহরণ ইত্যাদি কারণে তা বর্তমানে দেশে নাই বললেই চলে।
মৎস্য কর্মকর্তা জানান, এবার ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষ্যে ২ নভেম্বর থেকে ২২দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। বছরে দুবার এভাবে মাছ ধরা বাংলাদেশে বন্ধ থাকে। ফলে এ সময়ে পাঙাশ মাছও অবাধ বিচরণের সুযোগ পায়। আবার প্রজনন মৌসুমের পর ইলিশের পোনায় ভরে যায় বেশ কিছু এলাকা। আর ইলিশের পোনা খাবার হিসাবে গ্রহণ করে পাঙাশ মাছ। ইলিশ মাছ প্রজনন মৌসুমে ধরা বন্ধ করায় ইলিশ যেমন বাড়ছে, তেমনি আবার এর কারণে নদীতে পাঙাশও বাড়ছে। এ কারণে এবার বেশ বড় বড় সাইজের পাঙাশ পাচ্ছে জেলেরা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, কয়েক বছরের চেষ্টায় চাঁই আর বেহুন্দি জালের ব্যবহার পটুয়াখালীতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলাতেও এগুলো নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে। ফলে ছোটো পাঙাশগুলো নদীতে বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ইলিশ অভিযানের কারণে প্রচুর ইলিশ পোনা নদীতে বিচরণ করায় পাঙাশ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। নদীতে বড় সাইজের এত পাঙাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান কারণ।