Breaking News :

সাংবাদিক অপূর্ব অপুর ওপর হামলা: সাত জ‌নের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

অনলাইন ডেস্ক :

ব‌রিশা‌লে সময় টেলিভিশনের ব্যুরোপ্রধান ও সি‌নিয়র রি‌পোর্টার অপূর্ব অপুর ওপর হামলা সংবাদ প্রকাশের জের ধ‌রেই ঘটেছে ব‌লে নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন মামলার তদন্তকা‌রী কর্মকর্তা। এ ঘটনায় সাতজন‌কে অভিযুক্ত ক‌রে আদাল‌তে চার্জশিট জমা দি‌য়ে‌ছে পু‌লিশ।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) তদন্তকারী কর্মকর্তা ব‌রিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প‌রিদর্শক ছানোয়ার হোসেন জানান, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে হেনস্তা করতেই এ হামলার ঘটনা। তবে অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়‌নি‌। দীর্ঘ সাত মাস তদন্ত করে ২০ নভেম্বর সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হ‌য়ে‌ছে।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গে‌ছে, আসামি নুরে আলম হাওলাদার মামলার অন্য আসামি হাবিবুর রহমান ওরফে ট্যারা হাবিবকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিক অপূর্ব অপু সময় টেলিভিশনের অফিসে যাচ্ছে তা দেখিয়ে দেয়। তখন মামলার ৬ নম্বর আসামি হাবিবুর রহমান একটি রিকশায় করে নগরীর শীতলা‌খোলা এলাকায় অপূর্বর পথ‌রোধ ক‌রে তার ওপর হামলা চা‌লি‌য়ে হেনস্তা ক‌রে। একপর্যা‌য়ে অপু দৌ‌ড়ে গফুর সড়‌কের দি‌কে যেতে থাক‌লে প্রাইভেট কা‌রের পাশে থাকা মামলার ১ নম্বর আসামি জিহাদুল ইসলাম জিহাদ অপুর হাত ধরে। তখন অপু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পুনরায় দৌ‌ড়ে চলে যান।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায়, আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ৭ নম্বর আসামি শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের পরিকল্পনায় এবং আসামি নুরে আলম হাওলাদারের ইশারায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি জিহাদুল ইসলাম জিহাদ ও হাবিবুর রহমান বাদীর পথরোধ করে সাংবাদিক অপুকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় এবং হাবিবুর রহমান অপু‌কে মারধর করে বলে তদন্তে উঠে আসে।

মামলার ২ নম্বর আসামি মামুন সিকদার ওরফে ছিডা মামুন, ৩ নম্বর আসামি নুরুল মোমেন কোটনে,  ৬ নম্বর আসামি হাবিবুর রহমান ও ৭ নম্বর আসামি শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের বিরুদ্ধে ব‌রিশা‌লের বি‌ভিন্ন থানায় মাদকসহ একা‌ধিক মামলা র‌য়ে‌ছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা প‌রিদর্শক ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালের ২৯ মে বিকেল সাড়ে ৩টায় সময় টিভির বরিশাল অফিসে যাওয়ার পথে ব্যুরোপ্রধান অপূর্ব অপুর ওপর হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর সাংবাদিক অপু বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে প্রথমে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান কোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর সাইদুর রহমান। এরপর দায়িত্ব পান গোয়েন্দা শাখার প‌রিদর্শক হরিদাস নাগ। সবশেষে দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। এ কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমি পুরো ঘটনাটি বারবার তদন্ত করেছি। প্রতিবারই উঠে এসেছে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এ ঘটনা ঘটানোর কথা। তবে অপূর্ব অপুকে অপহরণচেষ্টার কোনো প্রমাণ পাইনি। চার্জশিট বা অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত বিচার করবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব‌রিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক অপূর্ব অপুর মামলার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। বারবার আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হামলা হয়েছে বলে আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় আমরা কয়েক আসামিকে গ্রেফতার করেছি। আবার অনেককে করতে পারিনি। তবে যারাই এ মামলার আসামি তাদের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
এদিকে এমন ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি সাংবাদিক ও সুধী সমাজের। পুলিশকে পেশাদার সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি সাংবাদিক নেতাদের।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সাত মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। অনেক আসামিকে গ্রেফতার করলেও মামলার প্রধান আসামিদের কিন্তু পু‌লিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা জামিন নিয়ে বাইরে আছে। আমরা চাই আদালত সব আসামিকে শাস্তির আওতায় আনুন।’

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, ‘অপুর ওপর হামলার ঘটনার শুরু থেকেই আমরা দেখেছি প্রভাবশালী একটি মহল ও প্রশাসন ঘটনাটি গুরুত্ব দিতে চায়নি। তবে আমরা মাঠে ছিলাম। অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হলো, অপুর ওপর সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই এ হামলা।’

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার বলেন, মূলধারার সাংবাদিকদের সবসময় টার্গেট করে হামলা করা হয়। এটা শুধু বরিশাল নয়, সারা দেশেই হচ্ছে। আর প্রভাবশালী মহলের চাপে অনেক সময় এসব মামলায় ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। তবে আমরা অপুর পাশে ছিলাম ও আছি । এ মামলায় যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে, এখন আদালতের কাছে আমরা ন্যায়বিচার দাবি করছি।’
সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ বলেন, ‘অপুর ওপর হামলার বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই পাশে ছিলাম। এ ঘটনায় আমাদের অনুমানই সত্যি হলো। সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই অপুর ওপর হামলা হয়েছে–তদন্তে এমনই উঠে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি আদালত প্রতিবেদনে উল্লিখিত সব আসামিকে শাস্তির আওতায় আনবেন।’

প্রসঙ্গত, অপূর্ব অপুর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করার পর পু‌লিশ বেশ ক‌য়েকজন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি‌ল। হামলার ঘটনার প্রতিবা‌দে সারা‌ দে‌শে বি‌ক্ষোভ ক‌রে‌ছি‌লেন সাংবা‌দিকরা।