তীব্র শীতে কাঁপছে ভোলা, ঘন কুয়াশায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
অনলাইন ডেস্ক :
ভোলায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। পাশাপাশি বইছে হিমেল হাওয়া। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন উপকূলীয় এ দ্বীপজেলা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের এ তীব্রতা। শীত বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের জনজীবন যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। এবারে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী পাড়ের গৃহহীন, ছিন্নমূল ও কর্মজীবীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে তাদের ঝুঁকিও বেশি। শীতের কারণে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। নদী পাড়ে বসবাসকারী ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র মানুষ ছাড়াও নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ। হঠাৎ নেমে আসা ঠা-ায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন অনেকে। অন্যদিকে, বেড়ে গেছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণও। গরম কাপড়ের বাজার বেশ জমে উঠেছে। শনিবার ভোলায় ঘন কুয়াশার কারণে সারাদিন দেখা মেলেনি রোদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে তীব্র হয়েছে শীত। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ভোলার সিনিয়র অবজারভার মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার ভোলায় তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি । তিনি আরও বলেন, চলতি শীত মৌসুমে এ জেলায় এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে কথা হয় ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকার মাছ বিক্রেতা বশির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র শীত, কুয়াশা আর প্রচন্ড বাতাসের কারণে আমরা গত ৩-৪ দিন ধরে নদীতে যাইতে পারি না। মাছও ধরতে পারিনা। শীতের কারণে বাজারে ক্রেতাও থাকেনা। তাই যাও ধরি তাও বেচতে পারিনা। ভাইয়া, আমাগো অনেক কষ্ট। ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মোঃ এরশাদ বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়লেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিংবা বেসরকারিভাবে গরম কাপড় কেউ দেয়নি। এ কারণে কষ্ট করেই থাকতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি আমরা। ভোলা শহরের উকিলপাড়া এলাকার মালেকুর রহমানের মেয়ে সাফিয়া রহমান পিয়া বলেন, আমি ঢাকা থেকে ভোলা এসেছিলাম বাবার বাড়ি বেড়াতে। শনিবার আবার চলে যাচ্ছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। এখন ইলিশা লঞ্চঘাটে অবস্থান করছি। ৩টায় কর্নফুলি-১৪ লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলা ছেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ সেই লঞ্চটি ঢাকা থেকেই ইলিশা লঞ্চ ঘাটে এসেছে বেলা ৩টায়। লঞ্চটি কখন ছাড়বে তা বলতে পারছি না।
কথা হয় গৃহবধূ মুজিযা রহমান পূণ্যর সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র শীতের কারণে আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত। তাই, সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখছি। তিনি আরও বলেন, আমার ঘর যেন বরফের মতো ঠা-া হয়ে আছে।
ভোলা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনের শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শীতে জবু-থবু অসহায় প্রাণীরাও।
ধনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়াকান্দি গ্রামের দিনমজুর মিরাজ, রিয়াজ, ইউছুফ বলেন, হঠাৎ নেমে আসা ঠা-ার কারণে কাজ করতে পারছিনা। অনেক সময় দিনেও আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি। আমরা এতো শীত সইতে পারতেছি না। তারা বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ কোন গরম কাপড় দেয়নি।
বিআইডব্লিউটিএ ভোলার পোর্ট অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-ঢাকা নৌরুটসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ঢাকা থেকে ভোলা এবং ভোলা থেকে ঢাকা গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচলও বন্ধ থাকছে।
এ বিষয়ে ভোলার ইলিশা ও লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী ফেরিঘাটে চলাচলকারী ফেরির ব্যবস্থাপক পারভেজ খান ভোলার বাণী’কে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে গত শুক্রবার রাত পৌনে ১১টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল করতে পারেনি। ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফেরি চললেও কুয়াশার কারণে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আবার ১২টা পর্যন্ত ফেরি চলতে পারে নি। ১২টা থেকে অবশ্য ফের চলাচল শুরু করছে।